বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি যখন সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে।

বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন -কোন কিছুই দৃশ্যত: চাপে ফেলতে পারেনি সরকারকে। উল্টো মামলা, গ্রেপ্তারসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি।

কিন্তু একদিকে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থতা অন্যদিকে নির্বাচনেও অংশ না নেয়া -বিএনপি তাহলে তাদের রাজনীতির কৌশল থেকে থেকে কী পেলো?

বিশেষ করে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকার পর দলটি আরো অন্তত: পাঁচ বছর একই পরিস্থিতির মুমানিকগঞ্জের বিএনপি নেতা জামিলুর রশীদ খান। মানিকগঞ্জের একটি আসন থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি তার দীর্ঘদিনের। কিন্তু দল নির্বাচনে না থাকায় মি. খানও পরে আর সেদিকে এগোননি। বরং আন্দোলনের উপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তার মূল্যায়ন হচ্ছে, আন্দোলনে গতি কম কিন্তু দল আছে সঠিক পথে।

মি. খান বলছিলেন, “আন্দোলনে হয়তো সেরকম গতি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আন্দোলন যে হচ্ছে, হরতাল-অবরোধ হচ্ছে এটা সবাই জানছে। রাস্তায় তো দূরপাল্লার গাড়ি চলছে না। সুতরাং আমরা ঠিকভাবেই চলছি। এখন ভবিষ্যত বলে দেবে যে আমরা ভুল করেছি, নাকি সঠিক।”

মি. খান বলছেন, তার দল যে নির্বাচন বর্জন করছে এটাও সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ তার ভাষায়, 'যে নির্বাচনের রেজাল্ট আগেই ঠিক করে রাখা’ সেখানে অংশ নিয়ে কোন লাভ নেই।

মি. খানের দলের কর্মকৌশল নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু নির্বাচন বর্জন নিয়ে দলের ভেতরে অনেকের মধ্যেই ভিন্নমত আছে। যদিও এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় কিংবা তৃণমূল কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।

তবে দলের কৌশলের বাইরে গিয়ে নিবাচনে অংশ নেয়া কিংবা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করায় গেলো দেড় মাসে বিশ জনেরও বেশি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।খোমুখি হতে যাচ্ছে বলেই অনেকে মনে করছেন।তাদেরই একজন সৈয়দ একে একরামুজ্জামান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদসহ দল থেকেই বহিস্কার করা হয় তাকে। সৈয়দ একরামুজ্জামানের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপির নির্বাচন না যাওয়ার কৌশল সঠিক নয়।

“আমি দল থেকে বের হই নাই। আমাকেই তারা বহিষ্কার করেছে। আমার এলাকার ভোটারদের একটা চাহিদা আছে, সেখানকার একটা রাজনৈতিক বাস্তবতা আছে। সেজন্যেই আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছি।”

তিনি বলছেন, বিএনপি’র আন্দোলনের কৌশল আরো নমনীয় হতে পারতো।

“সরকার পতনের যে একদফা আন্দোলন এবং এর মধ্যে কোন সংলাপ নেই। কোন পক্ষেই নেই। কিন্তু বিএনপি থেকে যেসব শর্ত, আমার মনে হয়েছে আমরা একেবারে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে গিয়েছিলাম।''

''আওয়ামী লীগ তো বারবারই বলেছে যে তারা এর আগের মতো নির্বাচন এবার করবেন না এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে বিদেশি চাপও ছিলো। সুতরাং এখানে দুটো পথ আছে -লড়াই করবো অথবা সরকারের উপর আস্থা রাখবো। আমার কাছে মনে হয়েছে, আরো একবার আস্থা কেন রাখবো না?”